এবার ঘাড় বাঁকা সমস্যা নিয়ে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) ভর্তি হয়েছিল ছয় বছরের শিশু রায়হান। কিন্তু অভিভাবকদের অনুমতি না নিয়ে তলপেটে শিশুটির হার্নিয়া রোগের অস্ত্রোপচার করেছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে গত শনিবার এই ঘটনা ঘটে। গতকাল সোমবার সকালে শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
এদিকে শিশুটির মা-বাবা জানান, ভুল অস্ত্রোপচারের পর রায়হান ট্রমায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। কাউকে দেখলে চিৎকার দিয়ে উঠছে। রায়হান বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকার লুত্ফর রহমান সড়কের দিনমজুর শাহজালালের ছেলে। সে স্থানীয় একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করে। জন্ম থেকেই সে ঘাড় বাঁকা রোগে আক্রান্ত। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তার এই সমস্যা বাড়ছিল।
রায়হানের মা সুমি আক্তার বলেন, ‘ঘাড়ের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসক দেখালে সেখান থেকে ভর্তির জন্য বলেন। সে অনুযায়ী গত ১৬ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর ওর গলায় পাঁচ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন ডা. তৌহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, ঘাড়ের এক পাশের কিছু মাংস বেড়েছে। অপারেশন করাতে হবে। সিরিয়াল অনুসারে গত শনিবার আমার ছেলেকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাই। অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করার পরে দেখি ওর ঘাড়ে কোনো অপারেশন করা হয়নি।
ডান পাশের তলপেটে অপারেশন করা হয়েছে। চিকিৎসকদের জিজ্ঞেস করলে তাঁরা জানান, হার্নিয়া অপারেশন করেছেন। কিন্তু আমার ছেলের তো হার্নিয়ার সমস্যা নেই। আমার ছেলের ঘাড় বাঁকা। ডা. তৌহিদুল ইসলাম বলেছিলেন, গলায় অপারেশন করা হবে। কিন্তু তাঁরা আমাদের না জানিয়ে ছেলের তলপেটে অপারেশন করে নিয়ে এসেছেন।’
রায়হানের বাবা শাহজালাল বলেন, ‘আমার ছেলের অপারেশন হওয়ার কথা গলায়, কিন্তু তারা অনুমতি না নিয়ে তলপেটে করেছে। আমার ছেলের কিডনি নিয়ে গেছে কি না তা জানি না। আমরা খুব আতঙ্কে আছি। আমি চাই তদন্ত করে এই ভুল চিকিৎস যে দিয়েছে সেই ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আমার ছেলের ভবিষ্যতে যে ক্ষতি হবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে?’
শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, রোগী ঘাড় বাঁকা রোগ নিয়ে ভর্তি হয়। এই রোগের সঙ্গে তার হার্নিয়া রোগও ধরা পড়ে। ঘাড় বাঁকা রোগটি একটু জটিল, তা ছাড়া দুটি অপারেশন একসঙ্গে করা যায় না। এ জন্য চিকিৎসক হার্নিয়া অপারেশন করেছেন। ঘাড় বাঁকা অপারেশন পরে করা হবে।
ঘাড় বাঁকা অস্ত্রোপচার করার কথা বলে নিয়ে শরীরের অন্য কোথাও অস্ত্রোপচার বিধিমোতাবেক কি না জানতে চাইলে মনিরুজ্জামান বলেন, ‘রোগীর অভিভাবক ও ডাক্তারের মধ্যে কাউন্সেলিং গ্যাপ ছিল। যে কারণে এমন অভিযোগ উঠছে। তবে এ ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ আমরা পাইনি। পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তৌহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘রোগীর হার্নিয়ার সমস্যা ছিল। তবে সেটা অস্ত্রোপচারের পর্যায়ে ছিল না। রোগীকে অবশ করার পর তাঁর ঘাড়ে অস্ত্রোপচারে সমস্যা দেখা দেয়। তখন রোগীর স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন দায়িত্বরত সার্জন। তাদের না পেয়ে সার্জন হার্নিয়ার অস্ত্রোপচার করেন। এ নিয়ে ভুল ভাবছেন অভিভাবকরা।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) বরিশালের সভাপতি ডা. ইসতিয়াক হোসেন বলেন, এক রোগের অস্ত্রোপচারের কথা বলে শরীরের অন্য কোথাও অস্ত্রোপচার করা সম্পূর্ণ বেআইনি। রোগীর শরীরে খুব ছোট অস্ত্রোপচার করতে গেলেও স্বজনদের লিখিত অনুমতি নিতে হবে। শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও যদি অনুমতি না নিয়ে কোনো অস্ত্রোপচার করা হয়, সেটিও আইনের পরিপন্থী। অবশ্যই রোগীকে আগে কাউন্সেলিং করতে হবে এবং তারপর লিখিত অনুমতি নিতে হবে।